ধর্ম ও জীবন

মুসল্লিদের লাব্বায়েক ধ্বনিতে মুখরিত পবিত্র মিনা নগরী

১০ লাখ মুসল্লি হজ আদায়ের জন্য এখন মিনায়, হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

সৌদিয়া আরব প্রতিনিধিঃ

বিশ্বের প্রায় ১০ লাখ মুসল্লি পবিত্র হজের অন্যতম ফরজ আদায়ের জন্য এখন সৌদী আরবের মিনায় অবস্থান করছেন। মিনা থেকে তারা যাবেন আরাফাত ময়দানে। শুক্রবার সেখানে শুরু হবে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা।

ইসলামের ৫ স্তম্ভের অন্যতম পবিত্র হজ। শুক্রবার পবিত্র আরাফাতের ময়দানেই শুরু হচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় জমায়েত।

হজের অন্যতম ফরজ আদায়ের জন্য আজ আরবী হিজরী বর্ষের ৮ জিলহজ হাজিরা সমবেত হয়েছেন পবিত্র নগরী মিনায়। গতকাল বুধবার পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারামে আসরের নামাজ আদায়ের পর থেকে হজের অংশ হিসেবে তাবুর নগরী মিনায় পৌঁছেছেন হাজিরা। সেখানে নামাজ আদায়সহ ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল আছেন তারা।

প্রতিবছর হজের সময় মুসল্লিদের অস্থায়ী আবাস হিসেবে মিনায় বসানো হয় লাখ লাখ তাবু। এবারও এক লাখ তাবুর নিচে প্রায় ১৪৪ ঘন্টা অবস্থান করবেন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা হজযাত্রীরা। সেই সব লাল পাথরের পাহাড় ঘেষা চৌচালা তাঁবুর নিচে মুসল্লিদের লাব্বায়েক ধ্বনিতে মুখরিত পবিত্র মিনা নগরী।

অন্য দেশের হাজিদের মতো বাংলাদেশের ৬০ হাজার হজযাত্রীদের নিয়ে মিনায় অবস্থান করছেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রীসহ মন্ত্রী পরিষদের কয়েকজন সদস্য।

শুক্রবার ৯ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য গাড়িতে বা ট্রেনে মিনা থেকে হাজিরা রওনা হবেন পবিত্র আরাফাত ময়দানের উদ্দেশ্যে। তবে ১৮ কিলোমিটার দূরত্বের এই পথ বেশীর ভাগ হাজি পাড়ি দেবেন পায়ে হেঁটেই। তবে হাজিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য গত কয়েক বছর ধরেই মেট্রোরেল চালু হয়েছে।

আরাফাতের পবিত্র ময়দানে বিদায় হজে ভাষণ দিয়েছিলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম। এইবার হজে মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেবেন শায়খ ড.আবদুল করিম আল-ঈসা ।

মিনায় স্থাপিত তাঁবুর সবই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। মিনায় হজপালনকারীরা ৮ জিলহজ রাত থেকে আরাফাতের ময়দানে চলে যাবেন ৯ জিলহজ। ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান শেষে মুজদালিফায় যেয়ে রাতযাপন করবেন। মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন শেষে ১০ জিলহজ তারিখে এখান থেকে ছোট ছোট কঙ্কর সংগ্রহ করে পুনরায় মিনায় যেয়ে বড় শয়তানকে (জামারায়ে উকবা) কঙ্কর নিক্ষেপ করে কোরবানি শেষে মাথা মুণ্ডিয়ে হালাল (ইহরাম খুলবেন) হবেন।

এর পর মক্কায় এসে তাওয়াফে জিয়ারত (তাওয়াফ ও সায়ি) শেষে আবার মিনায় যেয়ে (ছোট, মধ্যম ও বড়) শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে হাজিদের। এটা হজের ওয়াজিব আমল।

পবিত্র হজ উপলক্ষে মক্কা, মদিনা, মিনা, আরাফাত ময়দান, মুজদালিফা ও এর আশ-পাশের এলাকায় ১০ হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সঙ্গে কাজ করছে ১৬ হাজার গাইড।

এদিকে হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। হজযাত্রীদের জন্য মক্কা ও মদিনায় ২৩টি হাসপাতাল এবং ১৪৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রস্তুত করেছে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এছাড়া মিনায় হজযাত্রীদের চিকিৎসার জন্য চারটি হাসপাতাল ও ২৬টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। রোগীদের নিবিড় পরিচর্যার জন্য এক হাজারেরও বেশি শয্যা রয়েছে এবং বিশেষ করে হিটস্ট্রোক করা রোগীদের জন্য ২০০টিরও বেশি শয্যা রয়েছে। একই সঙ্গে ২৫ হাজারেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী কেউ অসুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

Related Articles

Back to top button