জাতীয়
Trending

সরকারের পদত্যাগে বিএনপির ‘এক দফা’ চূড়ান্ত না গতানুগতিক, প্রশ্ন নেতাকর্মীদের

সূত্রঃ ঢাকা টাইমস
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে বিএনপির যে ‘এক দফার’ আন্দোলন, সেটির কর্মসূচির ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। ‘এক দফা’ দাবিতে বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনের কথা বললেও রাজপথের কর্মসূচিতে তার প্রতিফলন নেই বলেই তাদের ভাষ্য। গত ১২ জুলাই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘এক দফার’ আন্দোলনের ঘোষণা দেন। বিএনপির এই এক দফা হচ্ছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরতে হবে, এরপর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
দলের নেতাকর্মীদের ভাষ্য, এক দফা ঘোষণার পর বিএনপি ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন গতি পেলেও তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি দলের হাইকমান্ড। বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, চলমান আন্দোলন কি সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন নাকি গতানুগতিক আন্দোলন তাইই তারা বুঝতে পারছেন না। তারা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও এসব দুর্বল কর্মসূচি নিয়ে ঢাকা টাইমসের কাছে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। ঢাকা মহানগরের সূত্রাপুর থানা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, তিনি এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত আন্দোলন দেখেছেন। সেসবের সঙ্গে আওয়ামী লীগকে হটাতে বিএনপির বর্তমান আন্দোলনের কোনো মিল নেই।
‘চূড়ান্ত আন্দোলন মানেই রাজপথ আর রাজপথ। এক দফা ঘোষণা করার আগে সবকিছু ভেবেই ঘোষণা করা উচিত ছিল। এক দফার কর্মসূচি কখনও মানববন্ধন, পদযাত্রা, গণমিছিল হতে পারে না’—যোগ করেন এই বিএনপি নেতা। ছাত্রদলের ঢাকা মহানগরের একটি ইউনিটের আহবায়ক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত নয়টি মামলা হয়েছে। জেল খেটেছি। পরিবার অপদস্থ লাঞ্ছিত হয়েছে। মোট কথা সরকার পতন আন্দোলনের নামে এসব ঝিমানো কর্মসূচিতে আমরা হতাশ।’
মূলত, গত বছরের শুরু থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলনকে টার্গেট রেখে মাঠ গোছাতে থাকে বিএনপি। ২০ দলীয় জোট ভেঙে দেওয়া হয়। করা হয় সমমনা রাজনৈতিক জোট। ইতোমধ্যে ৩৬টি দল সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়। বিএনপি এক দফা ঘোষণার আগেও দলগুলো পালন করেছে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, পদযাত্রা, গণমিছিলের মতো কর্মসূচি।
বিএনপির এক দফা ঘোষণার পর শুরুতে দলটির নেতাকর্মীসহ জোট নেতারা সাধুবাদ জানালেও চূড়ান্ত আন্দোলনের নামে যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে তা সরকার পতন আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে মেনে নিতে নারাজ শরিকরাও। তারা বলছেন, বিএনপি এক দফা আন্দোলনের বিষয়ে যে রোডম্যাপের কথা বলেছিল দলটি তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। গণতন্ত্র মঞ্চের এক শীর্ষনেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গতানুগতিক আন্দোলনে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো গত বছরের শেষ দিকে রাজপথ উত্তপ্ত করেছিল। এক দফা ঘোষণার পর রাজপথ বিরোধীজোটের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে মনে করেছিলাম। রাজপথের কর্মসূচিতে সেই ধারাবাহিকতা এখন নেই।’
যদিও বিএনপির একটি সূত্র দাবি করছে, বিএনপি যেহেতু সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করেছে, তার বাস্তবায়ন বিএনপি করবে। আগামী সেপ্টেম্বরেই তা দৃশ্যমান হবে। তবে কর্মসূচির দিনক্ষণ ও ধরন নিয়ে কঠিন গোপনীয়তা বজায় রাখছে দলটি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘চূড়ান্ত আন্দোলন মানে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করা? জ্বালাও পোড়াও করা? বিএনপি এই রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। অবৈধ সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে গণতান্ত্রিকভাবেই আন্দোলন করতে হবে।’ ‘আজকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির আন্দোলনে শুধু দেশের ১৮ কোটি মানুষই নয়, সারা পৃথিবীর সমর্থন আছে। বিএনপির জনবল আছে, জনসমর্থন আছে। আমরা অন্ধকার পথে ক্ষমতায় যেতে বিশ্বাসী নই।’
বিএনপির একটি অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দলের মাঝে এমনিতেই অনেক ঝড়-তুফান চলছে। শুদ্ধি অভিযান চলমান। আমি শুধু বলবো যুগ পাল্টিয়েছে। ঘুমানো কর্মসূচি দিয়ে গণমাধ্যমে থাকা যায়, কিন্তু ধাক্কা তো দূরের কথা সরকারের শরীরও স্পর্শ করা যাবে না।’ এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আন্দোলন সফল হলেই প্রমাণিত হবে চূড়ান্ত আন্দোলন সফল। সরকার পতনের দাবিতে বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততা বাড়ছে। এরশাদের বিরুদ্ধেও চূড়ান্ত আন্দোলনে জনগণ জয়ী হয়েছে। এ আন্দোলনেও জনগণ জয়ী হবে।’
তিনি বলেন, ‘পারিপার্শ্বিক ও বহির্বিশ্বের অনেক কিছু মাথায় রেখে সমন্বয় করে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সরকার জোড়াতালি দিয়ে বুঝাতে চাচ্ছে তারা ভালো আছে। আসলে তারা ভালো নেই। আজ দেশ-বিদেশের কোথাও এ সরকারের প্রতি আস্থা নেই। আপাতত এরা ক্ষমতা না ছাড়লেও হঠাৎই ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে।’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি কর্মসূচিই এক দফার ভিত্তিতে হচ্ছে। প্রতিটি ব্যানারেও এর উল্লেখ থাকে। বিএনপির এক দফার আন্দোলনে ভয় পেয়েই সরকার আমাদের কর্মসূচিতে নারকীয় হামলা চালাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির চলমান এক দফার আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা আছে বলেই সরকারের ভিতর কাঁপুনি সৃষ্টি হয়েছে। চূড়ান্ত আন্দোলন মানে সশস্ত্র আন্দোলন নয়। আর বিএনপি সশস্ত্র দলও নয়। জনগণই আমাদের অস্ত্র।’

Related Articles

Back to top button