জাতীয়সারাদেশ
Trending

সাঈদী ইস্যুতে রেকর্ড বহিষ্কার ছাত্রলীগে

ডেস্ক নিউজ
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর ঘটনায় ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় ছাত্রলীগের চারশ’র মতো নেতাকর্মীকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগের ৭৫ বছরের ইতিহাসে কোনও একটি ইস্যুতে এত বড় বহিষ্কার বা অব্যাহতির ঘটনা ঘটেনি। এই বহিষ্কার বা অব্যাহতির রেকর্ড ভাবিয়ে তুলছে অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করা সংগঠনটির সাবেক ও বর্তমান নেতাদের। আওয়ামী লীগের নেতারাও বলছেন, টনক নাড়িয়ে দেওয়া এই ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হলেও আগামীতে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
সাঈদীর মৃত্যুর ঘটনায় ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ছাত্রলীগের চারশ’র মতো নেতাকর্মীকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে সংগঠনটির একটি সূত্রে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ৩০০ প্লাস নেতাকর্মীকে অব্যাহতি ও বহিষ্কারের তথ্য পেয়েছি। এটির প্রকৃত সংখ্যা বলা যাবে না। অব্যাহতি ও বহিষ্কারের ঘটনায় মহানগর, জেলা, উপজেলা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব তথ্য আমাদের কাছে পৌঁছায়নি। সেই বিবেচনায় এই সংখ্যাটা আরও বেশি হতে পারে।
ছাত্রলীগ সূত্র বলছে, সংগঠনটির বর্তমান নেতৃত্ব দায়িত্ব নেওয়ার পর গত আট মাসে বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয়ভাবে ৬০-৭০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত ১৪ আগস্ট সাঈদীর মৃত্যুর পর ফেসবুকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পোস্ট দেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে এবং পরদিন থেকে একের পর এক জেলা, উপজেলা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অব্যাহতি বা বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়। প্রায় এক মাস হতে চললেও ঠিক কতজনকে এখন পর্যন্ত অব্যাহতি বা বহিষ্কার করা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট করে সেই তথ্য জানাতে পারছে না ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দফতর। কোনও একটা ইস্যুতে এত সংখ্যক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর অব্যাহতি বা বহিষ্কারের ঘটনা ৭৫ বছরে কখনও ঘটেনি বলে সংগঠনটির সাবেক ও বর্তমান নেতারা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, বিভিন্ন সময় নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অব্যাহতি বা বহিষ্কারের কম-বেশি ঘটনা ঘটে আসছে। এটি অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখা হলেও এবার সাঈদীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে অল্প সময়ের ব্যবধানে অব্যাহতি বা বহিষ্কারের সংখ্যাটা রেকর্ড গড়েছে। এটা অস্বাভাবিক ব্যাপার, নজিরবিহীন ঘটনা। যা রীতিমতো ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগকে বিব্রত করছে, নেতৃত্বকেও ভাবিয়ে তুলেছে।
একটা ইস্যুতে এত সংখ্যক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর অব্যাহতি বা বহিষ্কারের তথ্য জানা আছে কিনা, জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার জানা মতে নেই।’ এক্ষেত্রে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অব্যাহতি বা বহিষ্কারের এই ঘটনাকে ‘রেকর্ড সংখ্যা’ বলা যায় কিনা, তার উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলেন তিনি।
ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের চার নেতার একজন আব্দুর রহমান বলেন, ছাত্রলীগ করে সাঈদীকে ডিফেন্ড করে যারা কথা বলবে, তাদের তো ছাত্রলীগ করার অধিকার নেই। তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ তো অ্যাকশন নিচ্ছে। এক্ষেত্রে যেই চিহ্নিত হবে, তার বিরুদ্ধেই অ্যাকশন নেওয়া হবে।
ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র বলছে, সাঈদীকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় অব্যাহতি বা বহিষ্কারের যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে-কেউ কেউ না বুঝেই ‘ইন্নালিল্লাহ’র পোস্ট দিয়েছে। কেউ কেউ একজন মৃত মুসলিম ব্যক্তি হিসেবে ‘তার জান্নাত কামনা করে’ পোস্ট দিয়েছে। তাদের ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী বলা যাবে কিনা, তা নিয়েও সংগঠনের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে। কেউ কেউ আবার অনুপ্রবেশকারী হিসেবে নানা ধরনের পোস্ট দিয়েছেন, সেটিও বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন তাদের চিহ্নিত করাও এক ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও মনে করেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সাঈদীর ঘটনায় ছাত্রলীগে অব্যাহতি বা বহিষ্কারের ঘটনা রেকর্ড সংখ্যক কিনা জানি না। তবে বড় সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগে নীতি-আদর্শের বাইরে কাজ করলে কাউকে রেহাই দেওয়ার সুযোগ একেবারেই নেই। সুশৃঙ্খল ও ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালির সব অর্জনের সঙ্গে গৌরবময় ভূমিকা রেখেছে। এই সংগঠনের নীতি-আদর্শের বাইরে কত গেলো সেটি বড় কথা নয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটিই ইতিবাচক দিক।
ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত হলেই তাদের বহিষ্কার করা হয়- এটা স্বাভাবিক ব্যাপার উল্লেখ করে সংগঠনটির দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই নেতা আরও বলেন, ছাত্রলীগকে কলুষমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে, সম্মান-মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য, সংগঠনকে নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে পরিচালনা করার ব্যাপারে এবং অতীতের গৌরবগাথাকে রক্ষা করতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে এবার এত সংখ্যকের ফেসবুক পোস্টের ঘটনায় আমরা বিস্মিত। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে আমৃত্যু কারাদন্ডের আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হন তিনি। ওই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। গত ১৪ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এরপর থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত তার মৃত্যুতে সমবেদনা বা সহানুভূতি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ছাত্রলীগের আড়াই’শর বেশি পদধারী নেতা বহিষ্কার বা অব্যাহতি পান। এই তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে, যা এখন চারশ’র মতো দাঁড়িয়েছে। যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগেও সাঈদীর মৃত্যুতে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর পক্ষ নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই ছাত্রলীগে। যারা এমনটি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সব সাংগঠনিক ইউনিটকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ ধরনের সবাইকে বহিষ্কার করতে বলা হয়েছে।

আসামির স্ত্রীকে গোপনে দেখা করতে বলা সেই জেলারকে বদলি
বাংলাট্রিবিউন
কারাবন্দি স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে নারী দর্শনার্থীকে রাত কাটানোর প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে ঝালকাঠি জেলা কারাগারের কারাধ্যক্ষ (জেলার) আক্তার হোসেন শেখকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে বরিশাল কারা উপমহাপরিদর্শকের দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) ৪১২নং স্মারকে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়।
চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘পুনরাদেশ না পাওয়া পর্যন্ত নিম্নে বর্ণিত কর্মকর্তাকে (জেলার আক্তার হোসেন শেখ) প্রশাসনিক কারণে তার নামের পাশে উল্লেখিত কর্মস্থলে সংযুক্ত করা হলো। তাকে তাৎক্ষণিক কর্মমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) করত: সংযুক্তকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দিতে বলা হলো।’ বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঝালকাঠির কারা তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) মিলন চাকমা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘জেলারকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে ঝালকাঠি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
গত ৩১ আগস্ট কারা অধিদফতরের মহাপরিচালক, বরিশালের ডিআইজি প্রিজন ও ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই নারী। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ওই নারীর স্বামী একটি মামলায় ২৯ জুলাই থেকে ঝালকাঠি জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তার সঙ্গে দেখা করার জন্য অসংখ্যবার জেল গেটে গেলেও দেখা করতে পারেননি। পরে জেলের এক কর্মচারীর পরামর্শে জেলার আক্তার হোসেন শেখের সরকারি নম্বরে ফোন করে স্বামীর সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি জানান। পরবর্তী সময়ে তিনি (জেলার) তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা না করিয়ে ফোনে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিয়ে তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর চেয়ে নেন। এরপর থেকে জেলার বিভিন্ন সময় ওই নারীকে কল করে কথা বলতেন।
স্বামীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ভিডিও কল দিয়ে নানা ধরনের কথা বলে সময় কাটাতেন অভিযুক্ত ওই জেলার। এক পর্যায়ে প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ‌‌‌‘তাকে সময় দিলে তিনি তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দেবেন।’ এছাড়া জেলার ওই নারীর নলছিটির বাড়িতে এসে একসঙ্গে রাত কাটানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এতে রাজি না হওয়ায় তার স্বামীর সঙ্গে তাকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এমনকী স্বামীকে জেলের ভেতরে শাস্তি দেবেন বলেও ভয়ভীতি দেখান। এই ঘটনায় ওই নারী বরিশাল কারা উপমহাপরিদর্শক ও জেলা প্রশাসকের কাছে বিচার চেয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। – বাংলাট্রিবিউন/বিশেষ প্রতিবেদন

Related Articles

Back to top button