অভিমতজাতীয়নিবন্ধ
Trending

নির্বাচন ঘিরে অস্তিত্বের লড়াইয়ে বিএনপি

ডেস্ক নিউজ
আগামী জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে রীতিমতো অস্তিত্বের লড়াইয়ে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। একদিকে নির্বাচন, অন্যদিকে রাজপথের আন্দোলন। দুটিই এখন দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দলীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় বিএনপি। এ দাবি আদায়ে তাদের চলমান আন্দোলনে জয়ের বিকল্প নেই। অন্যথায় দলটি অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে বলে অনেকের ধারণা। এজন্য তারা আগামী (সেপ্টেম্বর) মাসকে চূড়ান্ত আন্দোলনের মাস হিসেবে ধরে নিয়েছেন। সেপ্টেম্বরে সরকার পতনে সর্বাত্মক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করেছে দলটি। ইতোমধ্যেই সারা দেশে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের কাছে এ সংক্রান্ত দলীয় হাইকমান্ডের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে চলে গেছে বিএনপি। মাঝে মাঝে দু-এক দিনের বিরতি দিয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করলেও ওঠানামা করছে বিএনপির এ আন্দোলনের মাত্রা। কোনো কোনো কর্মসূচিতে মাত্রাতিরিক্ত জনসমাগম হলেও পরদিনই আবার ‘ফ্লপ’ করছে। বড় বড় কর্মসূচিতে সারা দেশের নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত হলেও পরের দিনই আবার কম জনসমাগমের কর্মসূচিতে তাদের মধ্যে হতাশা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সম্প্রতি পেশাজীবীদের অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমরা এখন অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছি। চলমান এক দফা দাবি সবখানে ছড়িয়ে দিতে হবে। যে কোনো মূল্যে জনদাবি আদায় করেই ঘরে ফিরতে হবে। জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলমান আন্দোলনকে বাঁচা-মরার লড়াই হিসেবে দেখছে বিএনপি। নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে দল ক্ষমতার বাইরে। আগামীতে দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না গেলে নেতা-কর্মীদের ধরে রাখাটা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। ফলে চলমান আন্দোলনের এক দফা দাবি আদায়ের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি নিশ্চিত করতেই হবে তাদের। এ অবস্থায় আন্দোলনের ভবিষ্যৎ তথা সাফল্যের বিষয়টি নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে দলে। সারা দেশের তৃণমূল নেতারা আশাবাদী হলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণে কেন্দ্রের প্রায়ই দীর্ঘসূত্রতার কারণে মূলত এ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মতে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত থাকায় চলমান এক দফা আন্দোলনে বিজয় তাদের অর্জন করতেই হবে। অন্যথায় অস্তিত্বহীনতায় পড়বে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মাধ্যমে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পাশাপাশি ভিতরে ভিতরে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনী প্রস্তুতির দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা না থাকলেও পরোক্ষভাবে এ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গেই কাজ করে যাচ্ছে দলটি। নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের পর নির্বাচনে অংশ নেবে দল। বিএনপি নেতারা বলছেন, এবারের আন্দোলনে হেরে গেলে অস্তিত্ব হারাবে দলটি। এজন্য তারা সমমনা জোট ও দলগুলোকে নিয়ে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চলমান আন্দোলন সারা দেশের সর্বস্তরের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। এ আন্দোলনে সব শ্রেণিপেশার জনগণ সম্পৃক্ত হয়েছেন। এ আন্দোলনে বিজয়ের কোনো বিকল্প নেই। জনগণের এ আন্দোলন ব্যর্থ হলে গোটা রাষ্ট্রই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। তখন শুধু বিএনপিই নয়, সমগ্র জাতিই তার অস্তিত্ব হারাবে। সার্বভৌমত্বে টান পড়ে যাবে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করে। এরপর দুটি জাতীয় নির্বাচন তাদের সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২০১৪ সালে দলীয় সরকারের অধীনে ভোট বর্জন করে বিএনপি। সে সময় হরতাল-অবরোধের মতো রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুললেও কার্যত তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয় দলটি। তবে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফোরামের ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করে ভোটে অংশ নেয় বিএনপি। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সে নির্বাচনে মাত্র সাতটি আসন পায় বিএনপি। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এ লড়াই আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্নে এ সরকারের সঙ্গে আমরা কোনো দিন আপস করব না। সদ্য কারামুক্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় (ঢাকা বিভাগীয়) সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, জনতার এ আন্দোলনে আমাদের জিততেই হবে। এটা আমাদের অস্তিত্বেরই শুধু নয়, জীবন-মরণ লড়াই।

Related Articles

Back to top button