আন্তর্জাতিকধর্ম ও জীবন

আজ পবিত্র হজ্ব।

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা, ওয়ান্নামাতা, লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাকা। অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোন শরীক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই। সব সাম্রাজ্য তোমার।

আজ শুক্রবার পবিত্র হজ। মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব। আজ সারাদিন এমন মধুর ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে পবিত্র আরাফাতের পাহাড়ঘেরা ময়দান ছাপিয়ে আকাশ-বাতাশ মুখর ও প্রকম্পিত হবে। পাপমুক্তি ও আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনা নিয়ে ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে সমবেত হয়েছেন বিশ্বের ১৫০টি দেশ থেকে আসা ১০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লী। এরমধ্যে বাংলাদেশ থেকে এবার ব্যবস্থাপনা সদস্যসহ ৬০ হাজার ১৪৬ জন বাংলাদেশি হজ পালন করার কথা রয়েছে।

ধবধবে সাদা দু’টুকরো কাপড় পড়ে ইহরাম অবস্থায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় সূর্যোদয়ের পরই হজযাত্রীরা মিনা থেকে রওনা হন আরাফাতের মসজিদে নামিরার উদ্দেশ্যে। হজের তিন ফরজের মধ্যে ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। হজযাত্রীরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পবিত্র এ স্থানে অবস্থান করবেন। কেউ পাহাড়ের কাছে, আবার কেউ ইবাদত করবেন সুবিধাজনক জায়গায় বসে। আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার পর ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরা থেকে হাজিদের উদ্দেশ্যে পবিত্র হজের খুতবা দেবেন সউদি আরবের রাজনীতিক এবং দেশটির সাবেক বিচারমন্ত্রী শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা। এই আরাফাতের ময়দানেই মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।

বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল-সউদ এক রাজকীয় ফরমানে এ বছর হজের খুতবার জন্য তাকে নিযুক্ত করেন। শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন আব্দুল কারিম আল ঈসা বর্তমানে রাবেতা আল আলম আল ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক হেলাল অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

এ বছরও হজের খুতবা বাংলাসহ মোট ১৪টি ভাষায় শোনা যাবে। এবার হজের খুতবার বাংলা অনুবাদক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন দুজন। তারা হলেন- চট্টগ্রামের বাঁশখালীর মোহাম্মদ শোয়াইব রশীদ ও তার সহকারী খলিলুর রহমান।

হজের খুতবা শেষে হজযাত্রীরা জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহর জিকির আসকারে ব্যস্ত থাকবেন তারা। এরপর হজযাত্রীদের গন্তব্য মুজদালিফার দিকে। মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করে সেখানেই রাতযাপন করবেন। মুজদালিফা থেকে পাথর সংগ্রহ করে তারা পুনরায় মিনায় ফিরবেন। ১০ জিলহজ্জ সেখানে পৌঁছার পর হজযাত্রীরা পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হবে। প্রথমে মিনাকে ডানদিকে রেখে দাঁড়িয়ে শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ। এরপর দ্বিতীয় কাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কুরবানি।

তৃতীয় পর্বে মাথা ন্যাড়া করা। আর চতুর্থ কাজ তাওয়াফে জিয়ারত। হজযাত্রীরা মক্কায় ফিরে কাবা শরীফ তাওয়াফ ও সায়ী ( কাবার চারদিকে সাতবার ঘোরা ও সাফা মারওয়া পাহাড়ে সাতবার দৌঁড়ানো) করে পুনরায় মিনায় ফিরে যাবেন। ১১ জিলহজ্জ সেখানকার খিমায় (তাবু) রাতযাপন করবেন। দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে বড়, মধ্যম ও ছোট শয়তানের ওপর সাতটি করে মোট ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। এ কাজটি অবশ্যই সুন্নত। পরদিন ১২ জিলহজ্জ মিনায় অবস্থান করে পুনরায় একইভাবে তিনটি শয়তানের ওপর নিক্ষেপ করবেন সাতটি করে মোট ২১টি পাথর। এ কাজ শেষ হলে অনেকে সূর্যাস্তের আগেই মিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যান।

এদিকে হজের স্থানে হাজিদের সব রকমের সেবা দিতে কাজ করছে রাজকীয় সৌদি সরকার।
এছাড়াও মক্কার মিউনিসিপালিটি বিদ্যুৎ, সড়ক, যোগাযোগ, ট্যানেল, ব্রিজ, টয়লেট ও ড্রেনের ব্যবস্থা দেখাশোনা করছে। হজযাত্রীরা তাওয়াফ, নামাজে অংশ নেওয়া ও সায়ীর মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করবেন এবারের পবিত্র হজ।

Related Articles

Back to top button