বিনোদন

ইমানের পূর্ণতা পায় বিয়ের মাধ্যমে।

বিনোদন ডেস্কঃ

বিয়ে একটি বিধিবদ্ধ, সার্বজনীন এবং পবিত্র ব্যবস্থা। মানুষকে স্বেচ্ছাচারী জীবনের উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে রক্ষা করতে ইসলাম বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য জোর তাগিদ প্রদান করেছে।

নারী-পুরুষের পবিত্রতা রক্ষার একমাত্র পদ্ধতি বিয়ে। বিয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক প্রতিষ্ঠিত এমন এক সম্পর্কের নাম, যার ফলে নারী-পুরুষ দুজনে একত্রে বসবাস করে এবং বৈধ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে। সেই সঙ্গে পরস্পরের প্রতি তাদের কিছু দায়িত্ব অর্পিত হয়।

বৈরাগ্য ইসলামে নিষিদ্ধ। ইসলামে সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে বিয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিয়ে না করা ইসলামে নিষিদ্ধ ও ভর্ৎসনামূলক একটি অপরাধ। পবিত্র কুরআনে বিয়ে এবং স্ত্রী গ্রহণের ব্যবস্থাকে নবি-রাসূলের প্রতি আল্লাহতায়ালার বিশেষ দান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কুরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবি! তোমার আগেও আমি অনেক নবি-রাসূল পাঠিয়েছি এবং তাদের জন্য স্ত্রী ও সন্তানের ব্যবস্থা করেছি।’ সূরা রাদ বর্ণিত আয়াতের মর্মবাণী থেকে বোঝা যায়, বিয়ে আল্লাহ প্রদত্ত এক ঐশী বিধান। বিয়ে সম্পর্কে মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিয়েহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎ কর্মপরায়ণ, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে; যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেন।’ (সূরা নুর : ৩২-৩৩)।

বিয়ের মাধমে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি কিছু দায়িত্ব অর্পিত হয়। এসব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সুবিবেচনার অধিকারী হয়ে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর, সুখকর ও পবিত্র রাখতে হয়। দাম্পত্য সম্পর্কের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে মানব ধারা অব্যাহত রেখেছেন। তাই, পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব ইসলামে অপরিসীম।

পবিত্র কুরআনের পাশাপাশি নবি মুহাম্মাদ (সা.) সামর্থ্যবানদের বিয়ের প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বে কিংবা একেবারে বিয়ে না করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন নবি কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে তাদের বিয়ে করা কর্তব্য। কেননা বিয়ে দৃষ্টির নিয়ন্ত্রণকারী, যৌনাঙ্গের পবিত্রতাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন রোজা রাখে, কেননা রোজা তার ঢালস্বরূপ।’

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিয়ে না করার পরিণতি সম্পর্কে পবিত্র হাদিসে উল্লেখ আছে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-নবি কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বিয়ে করা আমার আদর্শ এবং স্থায়ী নীতি। যে লোক আমার এ সুন্নত অনুসারে আমল করবে না সে আমার দলভুক্ত নয়।’ বিয়ের মাধ্যমে অনেক পাপ কাজ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিয়ে দ্বীনের (ধর্মের) অর্ধেক হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিয়ে করল, তার অর্ধেক দ্বীন-ইমান পূর্ণ হয়ে গেল, সে যেন বাকি অর্ধেকের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করে।’ হাদিসে আরও উল্লেখ আছে, ‘স্বামী-স্ত্রী যখন একান্তে বসে আলাপ করে, হাসি-খুনসুটি করে তার সওয়াব নফল ইবাদতের মতো। তা ছাড়া স্ত্রীরা জগতের অস্থায়ী সম্পদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।

বিয়ের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা প্রত্যেক নর-নারীর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের মাধ্যমে ব্যভিচারের মতো বড় গোনাহ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। নৈতিক চরিত্রের উন্নতি ঘটে। বংশ পরম্পরা অব্যাহত থাকে। সুখময় সমাজ ও আদর্শ পরিবার গঠন সম্ভব হয়। মানসিকভাবে দেহ ও মন সুস্থ থাকে। মনে প্রশান্তি আসে। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক গভীর হয়। সর্বোপরি ইহ ও পরকালীন কল্যাণ লাভ হয়।

Related Articles

Back to top button