সৈকত ফিচার

এক চৌকিদার গোলাম ও সুলতান তুগররের কেচ্ছা

॥ অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন ॥
হযরত সেখ সাদী র: বলেন যে, আমি শুনিয়াছি যে, একদা সুলতান তুগরল শীতের মওসুমে রাত্রে বাহিরে পাহারাদার এক গোলামের নিকট দিয়া যাইতে ছিলেন। তখন দেখিতে পাইলেনা যে, উক্ত গোলাম শীতের শিশিরে এবং বরফের ঠান্ডায় থর থর করিয়া কাঁপিতেছে। উহা দেখিয়া বাদশার অন্ত:করণ দয়ায় গলিয়া গেল এবং আবেগের বশবর্তী হইয়া বলিয়া ফেলিলেন যে, তুমি এখনই আমার নিজের কাবা নিয়া পরিধান করিয়া লও। এ্ইখানে বালাখানার কিনারে একটু সময় দাঁড়াইয়া থাক, আমি চাকর দ্বারা পাঠ্ইায়া দিতেছি। ইহা বলিয়া তিনি বালাখানার মধ্যে যাইাতেই প্রিয় মাশুকের চেহারা দেখিয়া মন আনন্দে ভরিয়া উঠিল। মাশুকের সাথে খুশির খেলায় মত্ত হইয়া গেলেন। এদিকে কাবার কথা ভুলিয়া গেলেন। বেচারা চৌকিদার একেতো শীতের কস্ট ভোগ করিতেছিল, তদোপরি ইন্তেজারের যাতনাও সহ্য করিতে হ্ইতেছে। তখন তাহার শীতের কস্ট দ্বিগুন বলিয়া মনে হইতেছিল।
কবি বলেন এখন চিন্তা করিয়া দেখ, বাদশাহ তো ভুলিয়া গিয়া আরামে নিদ্রা য্ইাতেছেন। এদিকে চৌকিদার বেচারা ভোরে কি বলিবেন? ভাগ্যবান বাদশাহ যখন তাঁহার কোলে মাশুক পাইয়াছেন, সকল্ই ভুলিয়া গিয়াছেন। তাঁহার রাত্রি খুশীতে এবং মত্ততায় কাটিয়াছে। চৌকিদারের রাত্রি কিভাবে গুজরান হইয়াছে, উহার খবর কে রাখে? যে কাফেলার নেতা আনন্দে মশগুল থাকে, সে কেমন করিয়া বালুতে গাড়িয়া যাওয়া ব্যক্তির অবস্থা সম্বন্ধে চিন্তা করিবে?
অতএব কবি বলিতেছেন যে, হে নৌকার মাঝি, প্রথমে তুমি পানিতে ডুবা লোকগুলিকে পানির উপর জাগ্ইায়া লও। কেননা তাহাদের মাথা পানির নীচে চলিয়া গিয়াছে এবং অসহায় হইয়া পড়িয়াছে। হে শক্তিশালী যুবকের দল, আস্তে চল, কেননা, তোমাদের কাফেলার মধ্যে দুর্বল অসহায় বৃদ্দেরাও আছে। তুমি তো কাফেলার মধ্যে উটের হাওদাজের মধ্যে শান্তিতে শ্ইুয়া আছ। উটের লাগাম চালকের হাতে আছে। তোমার জন্য পাহাড়, জংগল ও মরুভুমির ভয় ন্ইা। তুমি কি ক্লান্ত পথিকের অবস্থা সম্বন্ধে চিন্তা রাখ? পথিকের পায়ের খবর রাখ? বিশ্রামাগারে অন্তরের শান্তিতে যাহারা বিশ্রাম করিতেছে, তাহারা কখন্ও ক্ষুধার্তের যাতনা বুঝিতে পারে না।
সেখ সাদীর বয়াত
“ ম কুন্ নালা আজ বে নাওয়্ইা বছে,
চু বিনি জে খোদ্ বে নাওয়া তর্ কাছে।”
অর্থাৎ হযরত সাদী র: বলেন যে, তুমি সম্বলহনিতার জন্য বেশী কাঁদিওনা। কেননা, তুমি যখন তোমার চ্ইাতে সম্বলহীনকে দেখিবে, তখন সান্তনা পাইবে।
একদা একজন চৌকিদার এক ব্যক্তির হাত বাঁধিয়া রাখিয়াছিল। সে সমস্ত রাত্রি মন:ক্ষুন্ন হইয়া অশান্তিতে কাটাইতেছিল। হঠাৎ অন্ধকার রত্রিতে এক ব্যক্তির কান্নার আওয়াজ তাহার কানে আসিয়া পৌছিল। সে তাহার দরিদ্রতার কারণে কাঁদিতেছিল। হাতে কড়া পরিহিত চোর উহা শুনিয়া বলিল, তুমি দু:খে চিন্তায় আর কত কাঁদিবে, এখন ঘুমাও। হে দরিদ্র ব্যক্তি, তুমি খোদার শুকুর আদায় কর, কেননা, তোমার হাত চৌকিদার কড়া দিয়া আটক করিয়া দেন ন্ইা।

Back to top button