ধর্ম ও জীবন

বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো ঈমানী দায়িত্ব- মুফ্তি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

মুফ্তি হেলাল উদ্দীন হাবিবী,

অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইবাদত। নিঃস্ব, নির্যাতিত ও বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহাঘ্যে এগিয়ে আসা, তাদের প্রতি সহানুভূতি-সহমর্মিতার হস্ত প্রসারিত করা নিঃসন্দেহে বরকতময় ও পুণ্যময় কাজ। মানুষের কষ্ট, দুর্দশা দেখে যার হূদয়ে রক্তক্ষরণ হয় না, সে প্রকৃত মুমিন নয়। নবুয়তের আগেও বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত হজরত মোহাম্মদ (স.) দুর্যোগপীড়িত মানুষের সেবায় স্ত্রী খাদিজার ধন-সম্পদ থেকে অকাতরে দান করেছেন। তিনি ২৫ বছর বয়সে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামক যে সেবামূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল দুস্থ-অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানো।

যারা নিঃস্ব, অভাবি ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত এতিম ও বন্দিদের খাবার দান করে। তারা বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা কামনা করি না। (সুরা দাহর, আয়াত ৮-৯)

হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করো এবং বন্দিকে মুক্ত করো; যাকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে। (বুখারি:৫৩৭৩) হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর শাসনামলে একবার মদিনায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। প্রচণ্ড খাদ্যসংকটে মদিনাবাসীর জীবন চরম দুর্বিষহ হয়ে উঠল। সেই সময় হজরত উসমান (রা.)-এর একটি ব্যাবসায়িক কাফেলা বিশাল খাদ্যসামগ্রী নিয়ে মদিনায় এসে পৌঁছল। এ খবর মদিনাবাসীদের মধ্যে বিদু্যতের গতিতে ছড়িয়ে পড়ল। মদিনার কিছু ব্যবসায়ী তার কাছে হাজির হয়ে খাদ্যসামগ্রী ক্রয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করল। হজরত উসমান (রা.) বললেন, যে আমাকে ৭০০ গুণ লাভ দিতে পারবে, আমি তার কাছে এই খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করব। কেননা, একজন আমাকে ৭০০ গুণ লাভ দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। এ কথা শুনে মদিনার ব্যবসায়ীরা নিরাশ হয়ে চলে গেল। অতঃপর তিনি তার সমুদয় খাদ্যসামগ্রী বিনা মূল্যে মদিনাবাসীদের মধ্যে বিতরণ করে দিলেন। ব্যবসায়ীরা বলল, আপনি ৭০০ গুণ লাভ দাবি করেছিলেন, অথচ এখন বিনা মূল্যে বিতরণ করছেন? জবাবে হজরত উসমান (রা.) বললেন, ‘আমি মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দান করছি; যিনি পবিত্র কোরআনে একের বিনিময়ে ৭০০ গুণ দেওয়ার ওয়াদা করেছেন।’

বন্যার কারণে সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও এর পার্শ্ববর্তী জেলার লাখ লাখ মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বানভাসি এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের নৈতিক, মানবিক ও ইমানি দায়িত্ব।

Related Articles

Back to top button