উখিয়াকক্সবাজারস্বাস্থ্য

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লক্ষাধিক চর্মরোগে আক্রান্ত।

উখিয়া প্রতিনিধিঃ

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ছোঁয়াচে চর্মরোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। অল্প জায়গায় ধারণক্ষমতার বেশি লোক বসবাসের কারণে একজনের কাছ থেকে অন্যজনের মধ্যে দ্রুত ছড়াচ্ছে এ খোসপাঁচড়া (স্ক্যাবিস)। ইতিমধ্যে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও বেসরকারি সংস্থাগুলো এটি প্রশমনে এগিয়ে এলেও প্রতিকার হচ্ছে না।

ক্যাম্পে চিকিৎসাসেবা দেওয়া বেসরকারি সংস্থা তথ্যমতে, ক্যাম্পগুলোতে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসবাসের ফলে এ রোগ দ্রুত ছড়ানোর ঝুঁকি কমানো যাচ্ছে না। একেকটি টয়লেট ব্যবহার করেন ২০-২৫ জন লোক। যেখানে একই সাবান বা অন্য ব্যবহার্য একে-অপরে ব্যবহার করেন। একটি টিউবওয়েল থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করেন ৩০০-৪০০ জন। এতে জটলা ও লাইন পড়ে যায়। ঘিঞ্জি পরিবেশের কারণে এ রোগ নিয়ন্ত্রণহীন বলে দাবি স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্টদের।মেডিসিন সেন্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) কমিউনিকেশনের মেডিক্যাল অ্যাকটিভিটি ম্যানেজার ডা. কামার উদ্দিন জানান, এটি স্ক্যাবিস রোগ—যা স্থানীয়ভাবে খোসপাঁচড়া বলে পরিচিত। এই রোগের প্রধান উপসর্গ চুলকানি। চুলকানির কারণে ক্ষত হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসা না পেলে কিডনি পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। সাধারণত বিছানা ভাগাভাগি এবং একই কাপড় বা ব্যবহার্য পণ্য একাধিক জন ব্যবহার কালে আক্রান্ত কেউ থাকলে এই রোগ দ্রুত ছড়ায়। তাই দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

এমএসএফ কমিউনিকেশন বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্ক্যাবিসে আক্রান্তের সংখ্যা গত তিন বছরের মধ্যে এ বছর সবচেয়ে বেশি। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে গড়ে ৪৩ হাজার চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করেছে সংস্থাটি। ২০২১ সালে চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৭৩ হাজারে পৌঁছে যায়। চলতি বছরের ১৪ মার্চ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত স্ক্যাবিস সংক্রমণ গণনা করে। এই সময়ে তাদের পরিসংখ্যানে আসে—হাকিমপাড়া ও জামতলী হেলথ সেন্টারে ৩৬ হাজার স্ক্যাবিস রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এছাড়াও ক্যাম্প-৮ ডব্লিউ এবং গোয়ালমারা হেলথ সেন্টারে চিকিৎসা নিয়েছে ৪ হাজার ২০০ জন স্ক্যাবিস রোগী। পাশাপাশি কুতুপালং, বালুখালী এবং উনচিপ্রাংয়ে আরো অনেক স্ক্যাবিস রোগী এমএসএফ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ক্যাম্পে স্ক্যাবিস রোগী বাড়ছে খবর পেয়েছি, তবে এখনো স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিষয়টি মারাত্মক পর্যায়ে গেলে আরআরআরসি ও ক্যাম্পে নিয়োজিত স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টরা আমাদের অবহিত করবেন।’ এরপরো সুনজর রাখা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন সিভিল সার্জন।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, আবহাওয়ার বৈপরীত্যের কারণে ক্যাম্পে নানা ধরনের মৌসুমি রোগ ছড়ায়। আর অতি ঘিঞ্জি স্থানে অধিক লোকের বাসের কারণে ছোঁয়াচে রোগগুলো দ্রুত ছড়ায়। স্ক্যাবিসও সেভাবে ছড়িয়েছিল। কিন্তু দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়াতে এখন তা নিয়ন্ত্রণে আসছে। আক্রান্তের সংখ্যা লাখ নয়, অর্ধলাখ বা তার কম হতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নিয়মিত ওষুধ ব্যবহারের ফলে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসছে আক্রান্তের সংখ্যা। এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে জানান তিনি।

Related Articles

Back to top button