আন্তর্জাতিককক্সবাজারসৈকত ফিচার

রোহিঙ্গা সংকটে স্থানীয়দের মৌলিক অধিকার, শ্রমবাজারের প্রভাব এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি।

৩ জুন ২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসী রাখাইন বৌদ্ধদের গণহত্যা, নির্যাতন ও জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা দুর্গম এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ শুধু মানবিক কারণে এই বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুকে আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসার জোগান দিয়ে যাচ্ছে সাধ্যমতো।

রোহিঙ্গা সংকটের শুরুতে স্থানীয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছিলো।কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তা হিতে বিপরীত হলো।কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষ গুলো নিয়মিত খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে।

প্রথমত: নিম্ন আয়ের মানুষ গুলোর আয়ের উৎস ছিলো পাহাড় নির্ভর।পাহাড় থেকে কাঠ সংগ্রহ করা,পানের চাষ করা,ধান চাষ এবং মৌসুমি ভিত্তিক বিভিন্ন শাক সবজি চাষের উপর তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো।রোহিঙ্গা সংকটের পর থেকে রোহিঙ্গারা পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বসবাস শুরু করার কারণে নিম্ম আয়ের মানুষ গুলোর আয়ের পথ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত: রোহিঙ্গাদের নিয়মিত খাদ্য,চিকিৎসা সহ প্রায় সব কিছু বিভিন্ন দেশি এবং বিদেশি এনজিওর মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করে আসছে।কিন্তু স্থানীয় নিম্ম আয়ের মানুষ গুলোকে যা দেওয়া হয় তা খুবই নগণ্য।স্থানীয়দের অভিযোগ মোট জনসংখ্যার দশ ভাগের একভাগ মানুষ এনজিও থেকে সাহায্য পায় মাত্র।যা পাই তাও সামান্য।যা স্থানীয় নিম্নের মানুষগুলোর মৌলিক চাহিদা পূরণ হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তৃতীয়ত: স্থানীয় শ্রম বাজারে রোহিঙ্গাদের আধিপত্য  বেড়েছে।রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ভাবে ক্যাম্প থেকে বাহির হয়ে স্থানীয় শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার পূর্বে যেখানে একজন স্থানীয়  শ্রমিক দিনে কাজ করে যেখানে ৫০০-৭০০ টাকা আয় করতো সেখানে রোহিঙ্গাদের কারণে সেই কাজ ২০০-৩০০ টাকায় করতে হচ্ছে।কারণ সস্তা শ্রমে রোহিঙ্গা যেকোন কাজ করে দিচ্ছে। রোহিঙ্গারা তাদের আয়ের অংশ যেখানে বিলাসিতার জন্য ব্যয় করতেছে,যেখানে স্থানীয় নিম্ম আয়ের মানুষ গুলোকে ২০০-৩০০ টাকা দিয়ে দৈনিক মৌলিক চাহিদা অন্ন,বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষার পিছনে ব্যয় করতে হচ্ছে।  রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জিনিস পত্রের উর্ধ গতি সেই সংকট আরো বেড়েই চলেছে।এতে স্থানীয় নিম্ম আয়ের মানুষ গুলোকে জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে।

চতুর্থত: রোহিঙ্গা সংকটের কারণে স্থানীয় মানুষ গুলো বিভিন্ন সমস্যায় ভুক্তভোগী হওয়ার কারণে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা  এনজিও গুলো চাকরির ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেওয়ার দাবি থাকলেও বেশির ভাগ এনজিও তা মেনে চলছে না।এনজিও গুলো ক্যাম্পের ভিতরে কম পারিশ্রমিকে রোহিঙ্গাদের নিয়োগ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।আবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে এনজিও গুলো তাদের আত্মীয়-স্বজনদের চাকরিতে নিয়োগ দিচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয়দের চাকরি থেকে ছাঁটাই করে একই জায়গায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের আত্নীয়-স্বজনদের নিয়োগ দিচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। আবার স্থানীয় যারা চাকরি করছে তার বেশির ভাগই নিম্ম পদের কর্মরত। উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার পরেও তাদের যথার্থ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না বলেও তারা জানান।রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা এনজিও গুলো স্থানীয়দের দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে কোন কাজ করছে না বলে স্থানীয়দের অভিমত রয়েছে।

নিরাপত্তা ঝুঁকিঃ

রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় সকল স্থরের মানুষের নিরাপত্তা ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলছে।রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো নিয়মিত ক্যাম্পের আশে পাশের মানুষকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে।এমনকি হত্যা সহ নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা।এতে স্থানীয় মানুষ গুলো নিজ দেশে ফিলিস্তিনের মতো বসবাস করছে বলে অভিমত প্রকাশ করছে।

 

উল্লেখ্য যে,রোহিঙ্গা সংকটে স্থানীয়দের মৌলিক অধিকার,শ্রমবাজারের প্রভাব এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি কক্সবাজার জেলা জুড়ে এর প্রভাব রয়েছে।

 

লেখক,

উপরিউক্ত তথ্য বিশ্লেষণ সমূহ ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকে,বিভিন্ন এনজিওতে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে বিভিন্ন জরিপ সরাসরি অংশে নেওয়ার সময় বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লেখা।

 

লেখক-

মো:মজিরুল তানভীর জেকী

মাস্টার্স(ফাইনাল)অর্থনীতি।

কক্সবাজার সরকারি কলেজ,কক্সবাজার

Related Articles

Back to top button