কক্সবাজারটেকনাফসারাদেশ
Trending

‘মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে রাখায় অভিযানকারীদের দেখেও ডাক দিতে পারিনি’

৩ বনকর্মী অপহরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফিল্মি স্টাইলে তিন বনকর্মীকে তুলে নিয়ে পাহাড়ে আটকে রেখে মুক্তিপণ পেতে অমানসিক নির্যাতন চালিয়েছেন অপহরণকারীরা। তাদের উদ্ধারে অভিযান চালানো বনকর্মী, বন পাহারাদলের সদস্য ও পুলিশকে কাছাকাছি দেখেও মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে রাখায় ডাক দিতে পারেননি অপহৃতরা। এভাবে নিপীড়ন সইয়ে অনাহারে থাকার প্রায় ৭৯ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার হতে পেরে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তারা। তাদের উদ্ধারের পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় তৈরি একনলা দুটি লম্বা বন্দুক ও ৫ রাউন্ড তাজা কার্তুজ জব্দ করে পুলিশ। এ সময় অপহরণকারী দলের এক সদস্যকেও গ্রেফতার করা হয়। সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে টেকনাফ থানায় প্রেস ব্রিফিংকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া-টেকনাফ সার্কেল) মুহাম্মদ রাসেল।
ব্রিফিংয়ে উদ্ধার হওয়া ভিকটিমদের একজন আব্দুর রহমান (৩৭) বলেন, বন পাহারাদলের সদস্য হিসেবে প্রতিদিনের রুটিন মতো আমরা দমদমিয়া পাহাড়ে দায়িত্ব পালন করছিলাম। হঠাৎ একদল অস্ত্রধারী এসে আমাদের তিনজনকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে পাহাড়ের ভেতর নিয়ে যায়। মারধর করতে করতে আটকের পর মুক্তিপণ পেতে নির্যাতন শুরু করে। বাড়িতে কল করে প্রত্যেকের জন্য ২০ লাখ টাকা করে দাবি করে আসছিল তারা। আমাদের ঠিকমতো খেতেও দেয়নি। তবে নির্যাতনের মাত্রা কমায়নি। পুলিশ ও স্থানীয়রা আমাদের খোঁজে পাহাড়ে গেলে আমরা তাদের দেখতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু অপহরণকারীরা তখন আমাদের অস্ত্র ঠেকিয়ে রাখায় ডাক দিতে পারিনি। এতে নিরবে চোখের জল ফেলেছি। সোমবার দুপুরের পর পুলিশ ও স্থানীয়রা পাহাড়ের চারপাশ ঘিরে রেখে অভিযান চালালে সন্ত্রাসীরা আমাদের রেখে পালিয়ে যান এবং তখনই তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করতে পারি।
উদ্ধার ভিকটিমদের মধ্যে অপর দুজন হলেন, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকার আবদুল মালেকের ছেলে মোহাম্মদ শাকের (২৪) ও মৃত আবদুল শুক্কুরের ছেলে আব্দুর রহিম (৩২)। আর আব্দুর রহমান (৩৭) একই এলাকার মৃত বকসু মিয়ার ছেলে। অভিযানে অপরাধী চক্রের সদস্য হিসেবে গ্রেফতার মো. ফয়সাল (৩০) মহেশখালী উপজেলার কালামারছড়ার বাসিন্দা।
উখিয়া-টেকনাফের (সার্কেল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শুক্রবার তিন বনকর্মী দমদমিয়া নেচার পার্ক সংলগ্ন পাহাড়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। হঠাৎ ১০-১৫ জনের একটি ডাকাতদল তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পাহাড়ের ভেতর নিয়ে যান। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিলেন। অপহরণের পর থেকে আমরা একাধিকবার পাহাড়ে ভেতর অভিযান চালাই। সোমবার বিকেল ৩টার দিকে গহীন পাহাড়ে তাদের অবস্থান শনাক্ত করে আমরা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছাই তখন ডাকাতদল পুলিশের ওপর গুলি বর্ষণ করে। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এক পর্যায়ে ডাকাতদল অপহৃত তিন ভিকটিমকে রেখে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল তল্লাশি চালিয়ে দুটি একনলা দেশীয় তৈরি বন্দুক ও ৫ রাউন্ড তাজা কার্তুজ জব্দ করি।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নুরুল বশর বলেন, তিন বনকর্মীর অপহরণের পর থেকে তাদের পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। দীর্ঘ ৭৯ ঘণ্টা বন বিভাগ, সিপিজি ও স্থানীদের সহযোগিতায় পুলিশ তাদের গহীন পাহাড় থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ বলেন, দীর্ঘ ৭৯ ঘণ্টা প্রচেষ্টার পর অপহৃত তিন বনকর্মীকে গহীন পাহাড় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। চক্রের এক সদস্যকেও আটক করা হয়। অভিযান কালে ডাকাতের আস্তানা থেকে দুটি দেশীয় তৈরি একনলা লম্বা বন্দুক ও কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। ভিকটিমদের আদালতের মাধ্যমে জবানবন্দি নিয়ে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে ওসি জানায়।

৩সি/সেকেন্ড লিডের নিচে/

Related Articles

Back to top button