উখিয়াকক্সবাজার
Trending

হলদিয়ার চেয়ারম্যান ইমরুলের বিরুদ্ধে এবার দুদকের তদন্ত

ভিজিডি ও কর্মসৃজনের টাকা নিয়ে অভিযোগ

ডেস্ক নিউজ
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ৩ নম্বর হলদিয়া পালং ইউনিয়নের বিতর্কিত চেয়ারম্যান এস,এম ইমরুল কায়েস চৌধুরীর বিরুদ্ধে এবার দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে তদন্তের জন্য। উক্ত ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে হতদরিদ্র মহিলাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের চাল ও কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা আত্নসাতের গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে তদন্তের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গত জুন মাসে কক্সবাজার পৌরসভার অনুষ্টিত এক নির্বাচনী সভায় ২০১৯ সালে অনুষ্টিত কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ এর অনুষ্টিত ইভিএম পদ্বতির নির্বাচনে পৌর এলাকার ৮ টি ভোট কেন্দ্রের ব্যালট ডাকাতির কথা অত্যন্ত গর্বের সাথে স্বীকার করেছিলেন উক্ত ইউপি চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের ওই বক্তব্যের ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক প্রশ্নের সৃষ্টি করে। সেই সাথে নির্বাচন কমিশনের ইভিএম পদ্ধতির নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়েও উঠে নানা কথা।
এ কারণে তাৎক্ষনিক বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন উক্ত ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে নির্দ্দেশনা প্রদান করে। কমিশনের নির্দ্দেশনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ ইতিমধ্যে উক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত পুর্বক প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দ্দেশনা প্রদান করে জেলা প্রশাসককে। জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে চেয়ারম্যানকে তার দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে কারন দর্শাও নোটিশও প্রদান করা হয়। সেই প্রতিবেদনও জেলা প্রশাসন থেকে প্রেরণ করা হয়েছে।
ইভিএম পদ্ধতির ভোট ডাকাতির বিষয়টির চুড়ান্ত ফয়সালা হতে না হতেই এবার ইউনিয়নের হতদরিদ্র মহিলাদের জন্য বরাদ্দ দেয়া চাল ও কর্মসৃজন প্রকল্পের বরাদ্দ দেয়া দরিদ্র শ্রমিকের নামে টাকা আত্নসাতের অভিযোগের তদন্তের নিদ্র্শেনা দেয়া হল। তবে হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব এস,এম ইমরুল কায়েস চৌধুরী ভোট ডাকাতির ভাইরাল হওয়া ভিডিও বক্তব্যটি তার প্রতিপক্ষের মিথ্যা এডিট করা ভিডিও বলে দাবি করে আসছেন। সেই সাথে হতদরিদ্র নারী ও দরিদ শ্রমিকের চাল-টাকা আতত্নসাতের বিষয়টি ইউনিয়নের নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্ধি প্রতিপক্ষের মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ বলেও বার বার জানিয়ে আসছেন।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর সীমান্ত উপজেলা উখিয়া এবং টেকনাফের জনজীবনে মারাত্নক প্রভাব পড়ে। উপজেলা দু’টির মানুষের দুর্গতি থেকে রক্ষার জন্য তদানীন্তন মন্ত্রীপরিষদ সচিব শহীদ পরিবারের সন্তান মোহাম্মদ সফিউল আলম ও সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ঐকান্তিক চেষ্টায় উখিয়া ও টেকনাফের জন্য ২০ হাজার করে মোট ৪০ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত চাল প্রধানমন্ত্রী বরাদ্দের নির্দেশ প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর উক্ত উপহারের মধ্যে হলদিয়া পালং ইউনিয়নের জন্য রয়েছে ৫ হাজার মেট্রিক টন চাল। দুদক প্রধান কার্যালয়ে প্রদত্ত হলদিয়া পালং ইউনিয়নের ভুক্তভোগি বাসিন্দারা লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, উক্ত ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডে ৫৭৮ টি কার্ড প্রদান করা হয়। কিন্তু চাল বিলি করা হয় ৪৫০টি কার্ডের অনুকুলে। বাদবাকি ১২৮ টি কার্ডের চাল উক্ত চেয়ারম্যানই ভোগ করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরুপ ২ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৮৫ টির মধ্যে ৩৮৫ টিতে চাল বরাদ্দ দেয়া হয় মাত্র। এভাবে প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০০/১৫০ জনসহ প্রায় এক হাজার দুইশত জনের কার্ডের চাল বরাদ্দ দেয়া হয়না।
অপরদিকে ২০২২-২০২৩ অর্থ সালে হলদিয়া ইউনিয়নের দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসুচির (ইজিপিপি) বরাদ্দ করা টাকাও ভুয়া শ্রমিক নিয়োগ দেখিয়ে বিকাশ এজেন্টের সাথে গোপন চুক্তির মাধ্যমে ইউপি মেম্বারদের যোগসাজসে বিপুল অংকের টাকা আত্নসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। উল্লেখ করা হয় যে, হলদিয়ায় এক হাজার ১৮৩ জন শ্রমিকের তালিকা অনুমোদন রয়েছে। এসব শ্রমিকের দৈনিক মজুরি হচ্ছে ৪০০ টাকা। এসব শ্রমিকের জন্য প্রথম কিস্তিতে ১০৮ দিনের সরকারি বরাদ্দ হচ্ছে ৫ কোটি ১১ লক্ষ ৫ হাজার ৬০০ টাকা।
অভিযোগে বলা হয়, ইউনিয়নের ৯ ম্বর ওয়ার্ডের প্রকল্প সভাপতি রফিক আহমদ মেম্বারের ১৬১ জন অনুমোদিত শ্রমিকের জন্য৬৯ ল্খ ৫৫ হাজার ২০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়। সরকারি হিসাবে সপ্তাহে ৫ দিন কাজ করার কথা থাকলেও মূলত সপ্তাহে মাত্র ৩ দিন কাজ করা হয়েছে। তালিকায় ১৬১ জন শ্রমিকের তালিকা থাকলেও বাস্তবে মাঠে ৪০ জনের বেশি রাখা হয়নি। অনুরুপ ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রকল্প সভাপতি স্বপন শর্মার আওতায় ২১৯ জন শ্রমিকের জন্য ৯৪ লাখ ৬০ হাজার ৮০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে ২১৯ জন শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ৭০ জন বাদে বাকি ১৪৯ জন ভুয়া শ্রমিকের নামে উক্ত মেম্বার নিজে সিম কিনে টাকা উত্তোলন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পিআইও’র যোগসাজশে এহেন অনিয়ম ও দুর্নীতির কাজ হবারও অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে।
ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রকল্প সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর ১৫৫ জন শ্রমিকের জন্য ৬৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। অথচ মাত্র ৫০ জন শ্রমিক কাজে লাগিয়ে হরিলুট করার অভিযোগ করা হয়। অনুরুপ ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রকল্প সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহানের আওতায় ১১৪ জন শ্রমিকের জন্য বরাদ্দ ৪৯ লক্ষ ২৪ হাজার ৮০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়। অথচ ৪৪ জন শ্রমিক সপ্তাহে তিন দিন কাজে লাগিযে আরো ৭০ জন ভুয়া শ্রমিকের নামে টাকা উত্তোলন করে আত্নসাৎ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগিরা। অপরদিকে ইউপি মেম্বারগন তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করে আসছেন।
এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ের নির্দ্দেশে দুদকের কক্সবাজারের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো মনিরুল ইসলামের গত ১০ সেপ্টেম্বরের স্বাক্ষরিত চিঠিতে উপ সহকারি পরিচালক জনাব পার্থ চন্দ্র পালকে তদন্তকারি কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। চিঠিতে দুদক বিধিমালা ২০০৭ (সংশোধিত ২০১৯) অনুস্মরণ পুর্বক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দ্দেশনা প্রদান করা হয়। সুত্র: আজকের দেশ বিদেশ

Related Articles

Back to top button