কক্সবাজারকক্সবাজার সদরসারাদেশ
Trending

সুপার ডা. মোমিনকে বদলি, সাংবাদিক মাহীর ‘ভুল চিকিৎসা’ তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন

জেলা সদর হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ মোহাম্মদ মোমিনুর রহমানকে বদলি করা হয়েছে। তাকে আগামী ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে নতুন কর্মস্থল ঢাকা মহাখালীর আইপিএইচে সহকারী পরিচালকের পদমর্যাদায় তত্বাবধায়ক হিসাবে যোগ দিতে বলা হয়েছে। তার জায়গায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (ওএসডি) ডা. মং টিংঞোকে পদায়ন করা হয়েছে।
তবে কক্সবাজারের স্থানীয় দৈনিক দৈনন্দিনের প্রধান প্রতিবেদক মহিউদ্দিন মাহী দাবি করেছেন, তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডা. মোঃ মোমিনুর রহমানকে পদ অবনমন করে বদলি করা হয়েছে। একই সাথে সদর হাসপাতালে তার ভুল চিকিৎসা ও তাতে ডা. মোমিনুর রহমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই কমিটিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. ইফতেখার আহমদকে সভাপতি, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী) ডা. বিজন কুমার নাথকে সদস্য ও একই হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেসিয়া) ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাসকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
অপরদিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের বিশ্বস্থ একাধিক সূত্র দাবি করছেন, সাংবাদিক মহিউদ্দিন মাহীর অভিযোগের ভিত্তিতে নয়, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ১১ জন শিক্ষক সংযুক্ত সদর হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ করার কারণেই হাসপাতাল সুপার ডা. মোঃ মোমিনুর রহমানকে বদলি করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালযের সিনিয়র সহকারী সচিব মো: আলমগীর কবীর স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ডা. মোমিনুর রহমানকে ঢাকা মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিউটের সহকারী পরিচালক পদে বদলি করা হয়। একই প্রজ্ঞাপনে ডা. মং টিংঞোকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক নিযুক্ত করা হয়।
এদিকে কক্সবাজারের স্থানীয় সাংবাদিক মহিউদ্দিন মাহী চলতি বছরের ২২ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ডা. মোঃ মোমিনুর রহমানসহ সদর হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা, ব্যক্তিগত আক্রোশবশতঃ অধীনস্থ চিকিৎসকের মাধ্যমে ভুল চিকিৎসা দিয়ে তাকে পঙ্গু করে ফেলার তথ্য  নির্ভর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পৃথক প্রজ্ঞাপনে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ রাশেদা সুলতানা।
জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিনের কক্সবাজার প্রতিনিধি মহিউদ্দিন মাহীর দাবি, চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি এপেন্ডিসাইটিসের তীব্র ব্যথা নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু চরম অবহেলা করে তাকে পাঁচ দিন হাসপাতালের কক্ষে ফেলে রাখা হয়। পরে ২৩ জানুয়ারি এপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন করা হয়। সে দিন ‘অদক্ষ ও দায়িত্বহীন’ বেসরকারি চিকিৎসক ডাঃ সূলভ আশ্চর্য্যকে দিয়ে স্পাইনালে এ্যানেসথেসিয়া দেয়া হয়।
সাংবাদিক মাহী দাবী করেন, আমাকে অপারেশনের দিন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বেসরকারি চিকিৎসক, কনসালটেন্ট নয় এমন একজন ডাঃ সূলভকে দিয়ে এ্যানেসথেসিয়ায় ইচ্ছেকৃত ভুল করা হয়। যার কারণে তিনি সেই দিন থেকে টানা ৮ মাস ধরে বাম পা অবশ অবস্থায় জীবন ধারণ করছেন।
মহিউদ্দিন মাহী জানান, অপারেশনের মাস তিনেক আগে সদর হাসপাতালের সুপার ডাঃ মোঃ মোমিনুর রহমানের অনিয়ম ও দূর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে হাসপাতাল সুপারের বক্তব্য গ্রহণ করেন। কিন্তু কোনো মিডিয়ায় সংবাদ না করতে হুমকি ও হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কর্মী খুরশীদাকে দিয়ে কক্সবাজার সদর থানায় একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করানো হয়। এর আগেই মহিউদ্দিন মাহী আত্নরক্ষার্থে সদর মডেল থানায় হাসপাতাল সুপার ডা. মোমিনুর রহমান ও সেই পরিচ্ছন্নতা কর্মী খুরশিদাকে আসামী করে অভিযোগ করে রাখেন।
তিনি আরো জানান, ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান তিনি। ওই দিন হাসপাতালের আরএমও ডাঃ আশিকুর রহমানকে দিয়ে জোরপূর্বক হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনো সংবাদ না লিখতে ও কোনো অভিযোগ না করতে লিখিত কাগজ নেয় তার কাছ থেকে। আড়াই মাস পর এপেন্ডিসাইটিসের তীব্র ব্যথা শুরু হলে হাসপাতালের আউটডোর বিভাগে গিয়ে ডাক্তার দেখান। সেই দিন সাংবাদিক মাহী হাসপাতাল সুপারের আক্রোশ থেকে বাঁচতে শুধু মহিউদ্দিন ও বয়স কম দেখিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তারপরও হাসপাতালের সুপার মোমিনুর রহমানের আক্রোশ থেকে বাঁচতে পারেননি তিনি।
মাহীর দাবি, অপারেশন কক্ষে তাকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে পঙ্গু বানিয়ে ফেলা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন মিডিয়া ও জাতীয় পত্রিকায় লেখালেখি হয়। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন তীব্র প্রতিবাদ ও বিচার দাবী করে।
এদিকে ওই বিষয়ে প্রতিকার পেতে সরকারের মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন ‘ভুল চিকিৎসা’র শিকার মহিউদ্দিন মাহী।

Related Articles

Back to top button