আইন-আদালতকক্সবাজারপেকুয়াসারাদেশ
Trending

স্ত্রীর মামলায় পেকুয়ার কৃষকলীগ নেতা মেহের আলীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা

নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা কৃষকলীগ নেতা মেহের আলীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। গত ৩১ আগস্ট চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহিদ হোসাইন এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। (যার নং ৯২৮/২৩)। গত ৩০ জুলাই একই আদালতে হাজির হয়ে মেহের আলীর স্ত্রী নুর বানু এ মামলাটি দায়ের করেন। মেহের আলী পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের জালিয়াখালীর দিশা মিয়ার পুত্র। জানাগেছে, তথ্য গোপন করে দ্বিতীয় বিয়ে, স্ত্রীকে শাররীক নির্যাতন, বিষ প্রয়োগে হত্যা ও যৌতুকের মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী জানান, নির্যাতনের মাত্রা সহ্য করতে না পেরে নুর বানু বাদি হয়ে গত ৩০ জুলাই চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। পরবর্তী ২৭ আগস্ট আদালতের হাকিম বিবাদী মেহের আলীকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। ওইদিন আদালতের হাকিম বিবাদীর উপস্থিতিতে মামলার বাদি নুর বানু যে বাড়িতে অবস্থান করেন সেখান থেকে ফ্লাট বাসা বরাদ্দ এবং প্রতিমাসে ১৫ হাজার টাকা খোরপোষ দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপ্রেক্ষিতে আদালত মেহের আলীকে জামিন দেন। পরবর্তী সময়ে মেহের আলী বাদিনীকে ফ্লাট বাসা ও প্রতিমাসে ১৫ হাজার টাকা খোরপোষ দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে। বিষয়টি গত ৩১ আগস্ট বাদিনীর আইনজীবি আদালতের নজরে আনেন।
বাদিনীর আইনজীবিরা জানান, আদালতের হাকিম মেহের আলীকে বিষয়টি বিবেচনার জন্য দুইঘন্টা সময় বেধে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সাড়া না দেওয়ায় হাকিম তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
স্বজনরা জানান, তার স্ত্রী নুর বানুকে বিষ মুখে প্রয়োগ করে হত্যা চেষ্ঠার অভিযোগ রয়েছে। গত ৯ জুলাই মেহের আলী তার স্ত্রীকে জোরপূর্বকভাবে বিষ প্রয়োগ করে। তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে স্বজনরা এগিয়ে এসে নুর বানুকে উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৬দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠে নুর বানু। এরপর থেকে মেহের আলী নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন। সম্প্রতি স্ত্রী নুর বানুকে তালাক দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে।
মামলার বাদি নুর বানু জানায়, প্রায় ত্রিশ বছর পূর্বে স্বামী মেহের আলীর সাথে ইসলামী শরীয়ামতে বিয়ে হয়। তাদের সংসার জীবনে এক মেয়ে ও দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে তাকে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন। একাধিকবার তার নির্যাতনের শিকার হয়েছি। মেহের আলী দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। সাধারণ মানুষের জমি দখল থেকে শুরু করে নিরীহ মানুষকে মারধরসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ভূমিদস্যুতা, জমি দখল, ডাকাতি ও হত্যাকান্ড সহ চকরিয়া ও পেকুয়া থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। মেহের আলী একজন সরকারি দলীয় প্রভাবশালী নেতার পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলেই নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন, হামলা, মামলা এমনকি প্রাণনাশের হুমকি।
গত বিকাল গ্রেফতারী পরোয়ানা ভুক্ত আসামি মেহের আলীর স্ত্রী নুর বানু জানান, তার স্বামী মেহের আলী দীর্ঘদিন ধরে অমানষিকভাবে নির্যাতন ও মারধর করে আসছে। তাকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করতে চেয়েছিলো। বাড়ি থেকে বের করার জন্য হামলা ও মামলার হুমকি দিচ্ছেন। মুলত স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে এসব করছেন বলে জানান তিনি। তিনি আরো অভিযোগ করেছেন, মেহের আলীর বড় সন্তান সাদ্দাম হোসেন ও মেয়ে কলি আক্তার। তারা বলেন, তাদের বাবা মার মধ্যে কোন সমস্যা ছিলো না। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে সুখ শান্তিতে থাকলেও এখন তাদের বাবার অমানষিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। মাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা চেষ্ঠার পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পেকুয়ায় নিজের দোকান খোলাকে কেন্দ্র করে তার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে ছুরিকাঘাত ও হামলা করেছে আমাদের উপর। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Related Articles

Back to top button