জাতীয়
Trending

অর্থের অভাবে স্থবির চট্টগ্রাম—কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেন প্রকল্প

ডেস্ক নিউজ
চট্টগ্রাম—কক্সবাজার রেললাইনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অক্টোবরের প্রথম দিকে এই রেললাইনের উদ্বোধন করা হবে। যদিও ট্রেনে করে কক্সবাজারে যেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। নিঃসন্দেহে দেশের দক্ষিণ—পূর্বমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থায় এটি একটি বড় মাইলফলক। কিন্তু চট্টগ্রাম—কক্সবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের দুরবস্থা থেকে সহজে নিস্তার পেতে মিলছে না। এই হবে, এই হচ্ছে– এমনটি বলা হলেও কার্যত নকশা চূড়ান্ত করা ছাড়া সড়ক প্রকল্পটিতে আর কোনো অগ্রগতি নেই। নকশা অনুযায়ী, মহাসড়কটিকে হবে ছয় লেনের। এর মধ্যে দুটি লেন থাকবে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য। এ দুটি লেন ব্যবহার হবে সার্ভিস লেন হিসেবেও।
মহাসড়কটি দুই লেনের বলা হলেও আদতে পাশাপাশি দুটি বড় বাস চলাচলে বেগ পেতে হয়। অনেক স্থানে বেশি অপ্রশস্ত হওয়ায় সড়ক প্রশস্ত করে ‘স্যান্ডার্ড টু লেইন’ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পটিয়া অংশে ১২ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। এদিকে নকশা চূড়ান্ত করা হলেও অর্থের অভাবে প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে জাপান সফর করেছেন। তখন এই মহাসড়ক প্রকল্পে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো—অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। এখন অর্থের জন্য জাপানের দিকে চেয়ে আছে সরকার। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার হয়ে সড়কটি চলে গেছে দেশের একেবারে দক্ষিণ—পূর্ব সীমান্ত এলাকা টেকনাফ পর্যন্ত। ঢাকা—চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সঙ্গে সড়কপথে পর্যটন শহর কক্সবাজারে চলাচলে একমাত্র ভরসা হচ্ছে এই মহাসড়ক। একের পর এক দুর্ঘটনা, যানজটে সময়ক্ষেপণসহ নানা কারণে দুই লেনের সরু সড়কটির বাঁকে বাঁকে ঘাপটি মেরে আছে ‘মৃত্যুফাঁদ’। সব মিলিয়ে মহাসড়কটি এখন সবার কাছে ‘সমস্যার মহাসড়ক’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। উখিয়া নিউজ ডটকম
বিদ্যমান সমস্যা কাটিয়ে উঠতে মহাসড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করা, বাইপাস সড়ক নির্মাণ ও বিপজ্জনক বাঁক সোজাকরণের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল নিরাপদ করার পাশাপাশি গতি আনতে নেওয়া হয় একের পর এক উদ্যোগ। কিন্তু সেসব উদ্যোগ বাস্তবে রূপ পাচ্ছে না। এতদিন ধরে নকশা সংক্রান্ত জটিলতা থাকলেও সেই সমস্যা ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। দুই লেনের মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে নয় বছরে অন্তত চারবার সমীক্ষা চালানো হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালে সমীক্ষা চালায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগ। তবে এরই মধ্যে নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সওজ সূত্র জানায়, মহাসড়কটিতে যানজট এড়াতে জনবহুল চার স্থানে ছয় লেনের বাইপাস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। জাইকার অর্থায়নে মহাসড়কের চন্দনাইশের দোহাজারী, লোহাগাড়ার আমিরাবাদ, সাতকানিয়ার কেরানীহাট এবং চকরিয়ায় বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের অগ্রগতি থমকে থাকলেও মহাসড়কটির বিভিন্ন স্থানে ছয় লেনের চারটি বড় ও মাঝারি ধরনের সেতু নির্মাণকাজ সেরে রাখছে সওজ। ইতোমধ্যে সড়কের চন্দনাইশের বরুমতি খাল, পটিয়ার ইন্দ্রপুল, দোহাজারীর শঙ্খ নদী ও চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে কিছু স্থানে সড়কের প্রশস্ততাও বাড়ানো হয়েছে। তবে বাইপাস ও উড়াল সড়ক নিয়ে সাতকানিয়া, চকরিয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সওজের চট্টগ্রামের দোহাজারী সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ সমকালকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম—কক্সবাজার মহাসড়কটিতে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য দুটি লেন থাকবে। এ হিসেবে সড়কটি ছয় লেনের হবে। ইতোমধ্যে নকশা প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে সওজের এই প্রকোশলী বলেন, ‘এখন মূলত অর্থের উৎস নিশ্চিত না হওয়ায় প্রকল্পের কাজ থমকে রয়েছে। জাইকা প্রকল্পটিতে অর্থায়নে আগ্রহী। কিন্তু বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী জাপান সফরকালে এই প্রকল্পে জাইকার অর্থায়নের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। অর্থায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত হলে প্রকল্পের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে। তখন সড়কটি নিয়ে আর কোনো অনিশ্চয়তা থাকবে না।’
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, একটি প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম—কক্সবাজার সড়কের শিকলবাহা ক্রসিং থেকে পটিয়া বাইপাস পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার প্রশস্ত করা হয়েছে। এখানে ১৮ ফুটের সড়ককে ৩৪ ফুটে উন্নীত করা হয়েছে। আপাতত যাতে নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল করতে পারে সে জন্য সড়কটি প্রশস্ত করা হয়েছে। সওজ বলছে, যে ১২ কিলোমিটার প্রশস্ত করা হয়েছে সেটি মূলত ‘স্ট্যান্ডার্ড টু লেন’।
সূত্র জানায়, মহাসড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করতে ২০১৩—১৫ সালে সমীক্ষা চালায় সুইডিশ কনসালট্যান্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সমীক্ষা প্রতিবেদনে ২২৫ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতের সুপারিশ করা হয়। ওই সময় ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। এরপর আবার ‘কন্ট্রোলড—একসেস হাইওয়ে’ হিসেবে নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু করে সওজ। তাতে কমে যায় মহাসড়কটির দৈর্ঘ্যও। পরিবর্তিত দৈর্ঘ্য ধরা হয় ১৩৬ কিলোমিটার। এজন্য ১৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবও (ডিপিপি) তৈরি করা হয়। সেই ওই নকশায় মহাসড়কটির প্রশস্ততা ধরা হয় ৮২ ফুট। দুই পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য রাখা হয় পৃথক লেন। পাশাপাশি ৩৩টি সেতু, ১৩৯টি কালভার্ট, ১৩টি ফুটওভার ব্রিজ ও দুটি ফ্লাইওভারে কথা বলা হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ৩১৬ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। এরপরে আবার জি—টু—জি ভিত্তিতে চারলেনে উন্নীত করতে সমীক্ষা করে জাপানী প্রতিষ্ঠান মারুবেনী। সরকারি—বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে মহাসড়কটি নির্মাণের পরিকল্পনা করে সরকার। এজন্য ২০১৯ সালে প্রকল্পটির ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। তবে আগের দুটির মতো সেই উদ্যোগও হারিয়ে যায়। সর্বশেষ বুয়েট পুরকৌশল বিভাগকে সমীক্ষা চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। অধ্যাপক ড. ইশতিয়াক আহমেদের নেতৃত্বে চালানো এই সমীক্ষা প্রতিবেদন ইতোমধ্যে সওজে জমা দেওয়া হয়েছে এবং সেটি অনুমোদনও হয়েছে।
সড়ক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘সমীক্ষার পর চট্টগ্রাম—কক্সবাজার মহাসড়ক নিয়ে দুটি প্রস্তাবনা দিয়েছিল বুয়েট। একটি প্রস্তাবনায় বিদ্যমান সড়কটি রেখে সার্ভিস রুটসহ ছয় লেনে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। আরেকটি প্রস্তাবনায় চার লেনের ভায়াডাক্ট সড়ক নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। সওজ প্রথম প্রস্তাবনাটি গ্রহণ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান সড়কটিকে সম্প্রসারণ করা হলে বিপুল পরিমাণে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। আবার সড়কটির দুই পাশে বিপুলসংখ্যক স্থাপনা রয়েছে, যেগুলো ভাঙতে হবে। কিন্তু ভায়াডাক্ট সড়ক হলে এগুলো করতে হতো না। এই ধরনের সড়ক দিয়ে নির্বিঘ্নে ঘন্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালিয়ে নির্বিঘ্নে কক্সবাজারে চলাচল করা যেতো।’ প্রসঙ্গত, ভায়াডাক্ট হচ্ছে এক ধরনের উড়াল সড়ক। ফ্লাইওভারের আদলে এই ধরনের সড়ক নির্মাণ করা হয়। সুত্র: সমকাল

Related Articles

Back to top button