জাতীয়
Trending

আদালতকে হিটলারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করা হয়েছে: রিজভী

ডেস্ক নিউজ
হাজিরার নামে আদালতকে এখন হিটলারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করা হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সরকার ভিন্নমতাবলম্বী ও বিরোধী নেতাকর্মীদের টুঁটি টিপে ধরার জন্য আদালতকে ব্যবহার করছে।’ বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘এ দেশের জনগণ নাগরিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার প্রত্যাশী। বাংলাদেশের মানুষ বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসন, ন্যায়বিচার, বহুমাত্রিকতা ও ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে। বাংলাদেশী জাতি সুপ্রাচীন, এখানে নীতি ও ন্যায্যতার ধারণা সুদীর্ঘকালের। সেই কারণে মানবাধিকারের পক্ষে অন্তর্নিহিত তাগিদ মানুষের মনে ক্রিয়া করে। বর্তমানে বাংলাদেশে কতৃর্ত্ববাদী শাসনে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরাই সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছে। নিপীড়ণ—নির্যাতন চরম মাত্রায় নামিয়ে আনা হয়েছে গণতন্ত্রকামী নানা শ্রেণী—পেশার মানুষের ওপর।’ বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিপীড়ণ যন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে অবৈধ ক্ষমতাকে সুরক্ষার জন্য। অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেষ মরণকামড় দেওয়ার জন্য লেলিয়ে দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। গতকাল ঢাকা জেলা আদালত প্রাঙ্গণে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট আয়োজিত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ফরমায়েশী সাজার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী আইনজীবীদের শান্তিপূর্ণ লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে পুলিশ কান্ডজ্ঞানহীন নারকীয় হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ জনের মতো পুরুষ ও মহিলা আইনজীবী।’ রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশকে এক উপসংহারহীন পরিস্থিতির দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে দেশ থেকে আদালতের ন্যায়বিচারের ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে গেছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশনায়ক তারেক রহমান এবং জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিদেরসহ লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছেন বিচারিক অসদাচরণের। আওয়ামী চেতনায় রঞ্জিত বিচারক’রা অন্যায্য আচরণ করছেন।’
তিনি বলেন, বর্তমানে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পালাক্রমে আদালতের সাজা ইতোপূর্বে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর হুমকির হুবুহ প্রতিধ্বণি। জেলখানাগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীদের দিয়ে পূর্ণ করার পরও প্রধানমন্ত্রীর আশা মেটেনি। আদালতের বারান্দাগুলোয় হাজার হাজার বিরোধী নেতাকর্মীদের ভিড়ে এক দম বন্ধ করা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
রিজভী বলেন, ‘২০১৪ ও ২০১৮ এর মতো পাতানো নির্বাচন করতে আবারও মরিয়া হয়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা। এই কারণে করুণা ভিক্ষার জন্য দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু কোথাও হালে পানি পাচ্ছেন না। কারণ বাংলাদেশের জনগণ এবং বিশ্বনেতৃবৃন্দ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো গণতন্ত্র, অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের পক্ষে। তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সমতা, ন্যায়বিচার ও জনগণের ইচ্ছার পক্ষে। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরলেও আর কোন লাভ হবে না। নির্যাতন ও বৈষম্য রোধ এবং অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কোন বিকল্প নেই।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনার কথা ও কাজের মধ্যে কখনোই মিল ছিল না। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার কথা ছিল না, কিন্তু ক্ষমতায় এসেই অসৎ উদ্দেশ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন, যার পরিণতি আমরা দেখেছি ২০১৪ ও ২০১৮ এর একতরফা জালিয়াতির নির্বাচনে। অথচ এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা অন্যের ব্রেনচাইল্ড হলেও সেটি আওয়ামী লীগের কোলে লালিত পালিত হয়েছে একটি জ¦ালাও—পোড়াওয়ের বিধ্বংসী আন্দোলনে। অথচ শেখ হাসিনা গোপন কথাটি গোপনে রেখে ক্ষমতায় এসেই ২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা মুছে দেন চিরদিন দেশের জনগণের প্রভু থাকার জন্য। আর তাই গণতন্ত্রের আওয়াজ পেলেই তাঁর পুলিশ বাহিনীর বুটের আঘাতে সেটি পদপিষ্ট করতে চান। গতকাল ঢাকা জেলা আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের বর্বরোচিত হামলা পূর্বপরিকল্পিত, শেখ হাসিনার অনুমোদনক্রমেই হাইকোর্ট ও জজকোর্টের পুরুষ ও নারী আইনজীবীদের রক্ত ঝরিয়েছে দলদাস পুলিশ। পুরুষ পুলিশের নারী আইনজীবীদের ওপর আক্রমণ সভ্যতার ভয়ঙ্কর কলঙ্ক।’
তিনি আইনজীবীদের ওপর এই পৈশাচিক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানান, যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। এসময় তিনি সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কতৃর্ক হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের বিবরণ তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহুরুল হক শাহজাদা মিয়া,যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, নির্বাহী কমিটির আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী (দফতরে সংযুক্ত) প্রমুখ। – প্রাইম নিউজ

Related Articles

Back to top button