কক্সবাজারকক্সবাজার সদরসারাদেশ
Trending

কক্সবাজারে কুখ্যাত জলদস্যু মঞ্জুরসহ চক্রের ৭ সদস্য গ্রেপ্তার, অস্ত্র উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজারে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে কুখ্যাত জলদস্যু সর্দার মঞ্জুরসহ চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। রোববার ভোরে পৌর শহরের নাজিরারটেক মোস্তাকপাড়া বাজার থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ৩টি দেশীয় তৈরী বন্দুক, ৪ রাউন্ড কার্তুজ, ৩ রাউন্ড এ্যামুনিশন, ২টি কিরিচ, ২টি সুইচ গিয়ার চাকু, ২টি টর্চ লাইট এবং ৭টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হল-মহেশখালীর কুতুবজোন ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ড সোনাদিয়ার মৃত বাহাদুর মিয়া পুত্র মঞ্জুর আলম ওরফে মঞ্জু (৩৮),বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ড এর আবু তাহেরের পুত্র মোঃ বাহার উদ্দিন বাহার ওরফে মাহবুব(৩২), কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ড এর কালুয়ার ডেইল এলাকার মৃত সামছুল আলমের পুত্র মকছুদ আলম (৩২), পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়ন ৫নং ওয়ার্ড এর কাকপাড়া এলাকার মৃত সৈয়দুল করিমের পুত্র মোঃ তোফায়েল (২১), চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ড এর পূর্ব মহাজের পাড়ার বদিউল আলমের পুত্র মোঃ দিদার (৩০), হাটহাজারীর মাদরাসা ইউনিয়ন ৫নং ওয়ার্ড এর উত্তর মাদরাসা (তেহমনি) এলাকার মৃত ইছহাকের পুত্র (৬) ইকবাল হোসেন (৩৫) এবং কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড এর উত্তর কুতুবদিয়া পাড়ার ইয়ার মোহাম্মদের পুত্র (৭) মোহাম্মদ রাশেদ (২৭)।
র‌্যাব-১৫’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী জানায়,কক্সবাজারের জেলে সম্প্রদায়ের অসংখ্য লোক বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু জলদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে উঠার ফলে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের জন্য রীতিমত আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতিনিয়তই জলদস্যুরা জেলেদের মারধর করে জাল, মাছ ও নগদ অর্থ ইত্যাদি লুটপাট করে নিয়ে যায়। সেই সাথে জলদস্যুরা অনেক জেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও ক্ষেত্রবিশেষ জেলেদের খুন পর্যন্ত করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের জলদস্যু চক্রকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‌্যাব-১৫ গোয়েন্দা নজরদারী ও তৎপরতা বৃদ্ধি করে।
অনুসন্ধানের একপর্যায়ে গোয়েন্দা সূত্রে র‌্যাব জানতে পারে যে, কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডস্থ নাজিরারটেক মোস্তাকপাড়া বাজারের উত্তর পশ্চিম মাছ ঘাটের চরের মধ্যে জলদস্যুদের একটি দল দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রসহ সমবেত হয়ে সমুদ্রে ডাকাতি সংঘটনের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। উক্ত গোয়েন্দা তথ্যের প্রেক্ষিতে অদ্য ১০ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ২টায় র‌্যাব-১৫’র একটি দল উক্ত স্থানে একটি বিশেষ অভিযান চালায়। এ সময় জলদস্যু দলটি র‌্যাবের উপস্থিতি বুঝতে পেরে ঘটনাস্থল থেকে পালানোর চেষ্টাকালে কুখ্যাত জলদস্যু সর্দার মঞ্জু’সহ চক্রের ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে আটক জলদস্যুদের হেফাজত হতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সর্বমোট ৩টি দেশীয় তৈরী বন্দুক, ৪ রাউন্ড কার্তুজ, ৩ রাউন্ড এ্যামুনিশন, ২টি কিরিচ, ২টি সুইচ গিয়ার চাকু, ২টি টর্চ লাইট এবং ৭টি বাটন মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
জলদস্যু দলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় গ্রেফতারকৃত মোঃ মঞ্জুর আলম ওরফে মঞ্জু একজন কুখ্যাত জলদস্যু সর্দার। কক্সবাজার অঞ্চলে মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত জেলে সম্প্রদায় ও অন্যান্যদের নিকট আতংকের অপর নাম মঞ্জু ডাকাত। মঞ্জু ডাকাতের নেতৃত্বে আটককৃত জলদস্যু ডাকাত দলটি প্রায় ৮-১০ বছর যাবত জলদস্যুতাসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে। তারা প্রতি ১/২ সপ্তাহ পরপর নদী ও সাগরে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত জেলেদের অস্ত্র-শস্ত্রের ভীতি প্রদর্শনসহ ট্রলারে ডাকাতি করে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জলদস্যু সর্দার মঞ্জু সরাসরি সমুদ্রে না গিয়েও জলদস্যুতার কাজে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে এবং তার পরিকল্পনা মোতাবেক ট্রলারে ডাকাতির ঘটনাগুলো সংঘঠিত হয়। তার অনুপস্থিতিতে চক্রের ২য় কমান্ড হিসেবে ডাকাত মোঃ বাহার উদ্দিন বাহার ওরফে মাহাবুব জলদস্যু দলটির নেতৃত্ব দিয়ে থাকে বলে জানা যায়। মাহবুব জলদস্যু ডাকাত দলের উপ-প্রধান, অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও সমুদ্রে ডাকাত দলের নেতৃত্ব দানকারী হিসেবে কাজ করে থাকে। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে মকছুদ ডাকাত দলের জনবল সরবরাহকারী ও মোহাম্মদ রাশেদ জলদস্যু দলকে নৌকা সরবরাহ করে অপরাধ কার্যে সহায়তা করে থাকে। এছাড়া তারা সবাই সমুদ্রে ডাকাতির কাজে সরাসরি অংশগ্রহণও করে।
র‌্যাব-১৫’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী আরও জানায়, ডাকাত মাহবুব এর বিরুদ্ধে ৩টি, মকছুদ আলম এর বিরুদ্ধে ২টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত জলদস্যুদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Related Articles

Back to top button