ধর্ম ও জীবন

সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ

মো. আমিনুল ইসলামঃ

আল কোরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘তোমরা হচ্ছ সর্বোত্তম জাতি যাদের সমগ্র মানব জাতির জন্যই বের করে আনা হয়েছে। তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তোমরা দুনিয়ার মানুষদের সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে, আর তোমরা নিজেরাও আল্লাহর ওপর ইমান আনবে, তাহলে কিতাবিরা যদি ইমান আনত তবে তা ছিল তাদের জন্য ভালো। তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক মুমিন আছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই ফাসেক।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১১০) এ আয়াতে উম্মতকে শ্রেষ্ঠ বলার পাশাপাশি তার কর্ম কেমন হওয়া উচিত তা-ও বলে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা সৎ কর্মের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকবে। ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, ‘সৎ কাজ হছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষ্য দেওয়া, আল্লাহ যা আদেশ করেছেন ও নিষেধ করেছেন তার স্বীকৃতি দেওয়া ও মেনে চলা, আর কাফের-মোশরেকদের বিরুদ্ধে জিহাদে থাকা। আর সবচেয়ে বড় মুনকার বা অসৎ কাজ হছে মিথ্যারোপ করা।’ (তাবারি) আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার হলো সৎ কাজের আদেশ বা অসৎ কাজের নিষেধ। সৎ কর্ম ও সৎ উদ্দেশ্য হলো একজন ব্যক্তির চরিত্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। উদ্দেশ্য সৎ না হলে কোনো অবস্থায়ই কর্ম সৎ হতে পারে না। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘সৎ উদ্দেশ্য ছাড়া কোনো কর্মই গ্রহণযোগ্য নয়।’ সৎ কাজ পালন ও অসৎ কাজ বর্জনে নিঃসন্দেহে জনকল্যাণ ও সামগ্রিক শান্তি নিহিত আছে। আল্লাহ আরও বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎ কাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে, আর তারাই সফলকাম।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১০৪) রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোনো খারাপ কাজ দেখবে, সে যেন তা হাত দ্বারা প্রতিহত করে, তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে মুখ দ্বারা প্রতিহত করবে, আর যদি তা-ও সম্ভব না হয় তাহলে তাহলে অন্তর দ্বারা ঘৃণা করবে।’ (মুসলিম, আবু দাউদ) রসুল (সা.)-কে এক লোক জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসুল, কোন লোক সবচেয়ে বেশি ভালো? তিনি বললেন, সবচেয়ে ভালো লোক হলো যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখে। (মুসনাদে আহমদ) সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে হলে আমাদের এ চারটি গুণের অধিকারী হওয়া উচিত- ১. নিয়তের বিশুদ্ধতা ২. নম্র ও দয়ালু হওয়া ৩. সহনশীল হওয়া ৪. বিপদে ধৈর্য ধরা। আল্লাহ রব্বুল আলামিন সুরা লোকমানে বলেন, ‘হে আমার বৎস! নামাজ কায়েম কর, সৎ কাজের আদেশ কর এবং অসৎ কাজের নিষেধ কর এবং বিপদে ধৈর্য ধর। নিশ্চয়ই এটা সাহসিকতার কাজ।’ (আয়াত ১৭)। সৎ কর্মে অগ্রগামী কারা? আল্লাহ বলেন, ‘আসলে যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, যারা তাঁর বাণীকে বিশ্বাস করে, যারা তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করে না, যারা তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে এ বিশ্বাস নিয়ে কম্পিত হৃদয়ে অন্তর থেকে দান করে তারাই সৎ কর্মে আসল প্রতিযোগী, তারাই সৎকর্মে অগ্রগামী।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত ৫৭-৬১) আমাদের মনে রাখতে হবে, ভালো কাজের আদেশ আর মন্দ কাজের নিষেধ এর উদ্দেশ্যই হলো মানুষকে ভালোর দিকে আহ্বান করা। এর জন্য আমাদের উচিত যাকে আহ্বান করা হছে তার সঙ্গে উত্তম আচরণ করা। আমাদের সবার উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও জান্নাত লাভের জন্য আমরা যেন প্রতি মুহূর্তে সৎ কাজের আদেশ দিতে পারি ও অসৎ কাজ প্রতিহত করতে পারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সে তৌফিক দান করুন। লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

Related Articles

Back to top button